ঢাকা,সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

প্রজনন মৌসূমে জেলার উপকূলজুড়ে শিকার : বিলুপ্তির মূখে কাঁকড়া সম্পদ

্র্‌্আতিকুর রহমান মানিক, কক্সবাজার ::

কক্সবাজার জেলাব্যাপী উপকূলে প্রজনন মৌসুমেও ডিমওয়ালা মা কাঁকড়া শিকারের মহোৎসব চলছে। দ্বীপ উপজেলা মহেশখালী-কুতুবদিয়াসহ পেকুয়া, চকরিয়া, উখিয়া, টেকনাফ ও সদর উপজেলার বিস্তীর্ণ উপকূলে প্রতিদিন শত শত মণ মা কাঁকড়া অবাধে আহরণ করা হচ্ছে । এসব এলাকার উপকূলীয় প্যারাবন ও ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল সমূহে  কাঁকড়া অবাধে চলছে মা কাঁকড়া শিকার। এভাবে প্রজননকালীন কাঁকড়া শিকার চলতে থাকলে চিংড়ির চেয়েও উজ্জ্বল সম্ভাবনাময় এ মৎস্যসম্পদ অচিরেই বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা জানান, বিশ্বের অন্যতম মৎস্যসম্পদ কাঁকড়ার প্রধান প্রজননক্ষেত্র হলো উপকূলীয় এলাকা ও ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল। অন্যদিকে বিশ্বের প্রধানতম ম্যানগ্রোভ এলাকা হলো কক্সবাজারসহ  দেশের দক্ষিণ উপকূলীয় এলাকা। এখান থেকে সংগৃহীত কাঁকড়া বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রফতানি হয়ে থাকে। এ থেকে প্রতিবছর অর্জিত হচ্ছে বিপুল পরিমান বৈদেশিক মুদ্রা। অন্যতম রপ্তানীপণ্য  কাঁকড়ার প্রজনন মৌসুম জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি দুই মাস। প্রজনন মৌসুমে উপকূল ও ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলের লোনা পানিতে এরা ডিম ছাড়ে। মাঘ মাসের প্রথম অমাবস্যায় সবচেয়ে বেশি ডিম দিয়ে থাকে স্ত্রী কাঁকড়া।
অন্যদিকে জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি এ দু’মাসজুড়ে সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, হংকং ও  চীনসহ বিভিন্ন দেশে নানা ধরনের উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। এসব উৎসবের খাদ্য তালিকায় ডিমওয়ালা কাঁকড়ার চাহিদা সবচেয়ে বেশি। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক বাজারে ডিমওয়ালা কাঁকড়ার চাহিদা সবচেয়ে বেশি এবং এ সময় দামও থাকে সর্বোচ্চ। তাই বেশি দামের আশায় এবং সুন্দরবন ছাড়া অন্য ম্যানগ্রোভ এলাকায় প্রজননকালীন কাঁকড়া শিকার বন্ধের সরকারি উদ্যোগ না থাকার ফলে ডিমওয়ালা কাঁকড়া শিকারে চলে মহোৎসব।

কক্সবাজার উপকূলে প্রতিদিন শত শত শিকারি ডিমওয়ালা কাঁকড়া শিকার করছে। এক কাঁকড়া শিকারি জানান, প্রতিদিন ৩/৪ কেজি কাঁকড়া পান। ৪/৫ টি কাঁকড়ায় এক কেজি হয় এবং প্রতি কেজি চার- পাঁচ শ’ টাকায় বিক্রি করেন। এখন কাঁকড়া বেশি ধরা পড়ছে এবং দামের দিক দিয়েও ভালো। সদর উপজেলার ঈদগাঁওর  কাঁকড়া আহরণকারী জেলে আনোয়ার, গিয়াস উদ্দীন ও নাছির জানান, কাঁকড়া শিকার করে বিভিন্ন আড়তে সাপ্লাই দিচ্ছেন। কাঁকড়ার আড়তদার রাশেদ  জানান, এখন ডিমওয়ালা কাঁকড়া পাওয়া যায় বলে ঢাকা-চট্টগ্রামের আড়তে এসব কাঁকড়ার বেশ চাহিদা রয়েছে এবং দামের দিক দিয়েও ভালো। অন্য সময় ডিমওয়ালা কাঁকড়া পাওয়া যায় না বলে তেমন চাহিদা থাকে না। চকরিয়া-কক্সবাজার ও আশপাশ এলাকার অর্ধশতাধিক আড়তদার প্রতিদিন কয়েকশ’ মণ ডিমওয়ালা কাঁকড়া ঢাকায় পাঠান বলেও জানান। উপকূলীয় ম্যানগ্রোভ অঞ্চল কাঁকড়ার প্রজনন ক্ষেত্র ও এখান থেকে হরদম শিকার করা হলেও বনবিভাগ এ ব্যাপারে কোন পদক্ষেপ নিচ্ছেনা। কক্সবাজার জেলা মৎস্য কর্মকর্তা অমিতোষ সেন জানান, কাঁকড়া শিকার সম্পর্কে মৎস্য অাইনে কোন নির্দেশনা না থাকায় জেলা মৎস্য দপ্তর  থেকে এ ব্যাপারে কোনো ব্যাবস্হা নেওয়া যাচ্ছে না।

পাঠকের মতামত: